করিডোরে কে ও?
তারিখটা ছিল ২০১৩ সালের ২৫ শে মে। মেয়েরা যেভাবে কারণে-অকারণে বিভিন্ন তারিখ মনে করে রেখে দেয়, ঠিক সেভাবেই এই তারিখটা আমি স্মৃতির মণিকোঠায় সযত্নে লালন করে চলেছি। তখন থাকি আমি শান্তিনিকেতনে । যাদবপুরে এসেছি ছোটবেলার বান্ধবী মৌটুসীর সাথে দেখা করতে। মৌটুসী তখন যাদবপুর ইউনিভার্সিটির রিসার্চ ফেলো, গড়িয়ার কাছে এক জায়গায় পেইং গেস্ট হিসেবে থাকে। ওর ডিপার্টমেন্টের আরেকটি মেয়ে তানিয়াও ততদিনে আমার বেশ বন্ধু হয়ে উঠেছে। আমরা তিনজনে মিলে ঠিক করেছি সেদিন মৌটুসীর আস্তানায় রাত কাটাবো আর সারারাত জেগে তুমুল আড্ডাদেবো।
আমি তো যথারীতি সন্ধে নাগাদ যাদবপুর গিয়ে পৌঁছলাম। ইউনিভার্সিটির মধ্যে ঢুকে লক্ষ্য করলাম, ভেতরটা সেদিন কেন জানি না বেশ ফাঁকা ফাঁকা। লোকজন, ছেলেপুলে নেই বললেই চলে। দীর্ঘ পথ একা একা হাঁটছি। ইউনিভার্সিটির মধ্যে বাইরের গাড়ি-ঘোড়ার আওয়াজ একটু কম। ভ্যাপসা গরম। সেদিন গাছের পাতাগুলোও অসম্ভব স্থির হয়ে জানান দিচ্ছিল, কিছু একটা ঘটবে, কিছুক্ষণ বাদেই ঘটবে...
হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে মৌটুসীদের ডিপার্টমেন্টের সামনে এসে উপস্থিত হলাম। দেখি, ওদের বিল্ডিং-এর একতলার করিডোরে সেদিন আলো নেই। ওরা নিচের তলার যে ঘরটায় বসতো সেই ঘরেই শুধু টিমটিম করে আলো জ্বলছে। করিডোরে অন্ধকার যেন জাঁকিয়ে আসর বসিয়েছে। রুমে মৌটুসী আর তানিয়া ছাড়া আর কেউ ছিল বলে তো মনে পড়ছে না। আরেকজন কার জানি আসার কথা ছিল সেদিন। ওরা তার সাথে যোগাযোগ করার বহু চেষ্টা করে যাচ্ছিল। কিন্তু কিছুতেই যোগাযোগ করে উঠতে পারছিল না। এমন সময় আমরা, যারা যারা সেদিন ওই ঘরটাতে ছিলাম, হঠাৎ আবিষ্কার করলাম আমাদের প্রত্যেকের মোবাইল-টাওয়ার একসাথে গায়েব। সুতরাং, যিনি আসবেন তাঁকে কল বা এস. এম. এস. কোনোটাই করার আর উপায় রইল না।জানার কোনো পথ নেই যে তিনি ক’দ্দুর, আদৌ আর আসবেন কিনা, ইত্যাদি। অগত্যা অপেক্ষা। উনি না এলে আমরা ওখান থেকে চলে যেতেও পারছি না। এদিকে দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমরা খাবার-দাবার কিনে তারপর মৌটুসীর ঘরে যাবো ঠিক করেছি। এমন সময় মৌটুসী দরজা দিয়ে দেখতে পায় করিডোরে কে যেন একটা হুস করে চলে গেল। সেই ‘হুস’-টা এতোই ‘হুস’ যে সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় ঘুরিয়েও তাকে আর দেখা গেল না। তো আমি ভাবলাম, যাঁর আসার কথা তিনিই হয়ত এসেছেন, কিন্তু কোন ঘরটায় আমরা রয়েছি বোধহয় ঠিক ঠাওর করতে পারছেন না। আমি দৌড়ে গেলাম দেখতে। বেরিয়ে দেখি কেউ নেই! আমি করিডোর ধরে এগোতে লাগলাম। অন্ধকারের যে এতো রকম শেড হয়, কই আগে তো জানতাম না। কোথাও বেশি গাঢ়, কোথাও কম, কোথাও আবার মাঝারি, কোথাও বা মাঝারির থেকে একটু বেশি –এভাবে আলো-আঁধারির সংমিশ্রণে অন্ধকার যেন আমায় ঘিরে ধরে নাচতে শুরু করে দিল, ছেলেবেলায় ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-এ যেমন ভূতের নাচ দেখেছিলাম যেন ঠিক তেমনি। নিজের পায়ের শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ পাচ্ছি না। কিছুদূর যাবার পর করিডোরটা বাঁ দিকে বাঁক নিল। বাঁক নিয়ে কিছুটা যাবার পর একটা বেরোবার দরজা দেখতে পেলাম। কিন্তু, মানুষজন কাউকে দেখতে পেলাম না। হতে পারে যিনি এসেছিলেন তিনি ওই দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেছেন। আমি নিজে যথেষ্ট জোরে হাঁটি বলে জানি। মৌটুসী যাকে দেখেছিল, তবে সে কত তাড়াতাড়ি হাঁটে যে এতো দূর এসেও আমি তার টিকিটি দেখতে পেলাম না? এসব সাত-পাঁচ ভেবে ফেরার পথ ধরলাম। বাঁক ঘোরার আগেও পেছনের দরজাটা ভালো করে দেখে নিয়েছি। টার্নটা নেবার পর ঠিক দু-পা গেছি, শুনি কে যেন আমার নাম ধরে ডাকছে আর আওয়াজ আসছে পেছন দিক থেকে। ভুল শুনলাম? ঘাড় ঘোরাতেই দেখি ওই বাঁকটার মুখে কে যেন দাঁড়িয়ে। আবছা আবছা। দেখে মনে হল চোদ্দ-পনেরো বছরের একটি বালক। তাজ্জব ব্যাপার। এই মাত্র তো এ ত্রি-সীমানায় কেউ ছিল না। এরই মধ্যে এই বাচ্চা ছেলেটা কোত্থেকে এসে পড়ল? না হয় মানলাম ছেলেটা পিছনের দরজাটা দিয়ে ঢুকেছে, তাও নিমেষের মধ্যে এতদূর এসে পড়ল কী করে সে প্রশ্নটা তো থেকেই যাচ্ছে। সর্বোপরি, আমার নাম জানলো কী করে? কে এই কিশোর? আমি ছেলেটার দিকে ফিরে অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞেস করলাম- “কে”? ছেলেটি কোনো উত্তর দিল না। এক-পা দু-পা করে ছেলেটির দিকে এগোতে থাকলাম। আমি ছেলেটির সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। কোত্থেকে এক টুকরো আলো এসে পড়ছিল ওর মুখে। সেই আলোতে আমি ছেলেটির মুখটা দেখতে পেলাম। মুখে বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্য নজরে পড়ল না। কিন্তু, চোখে চোখ পড়তেই বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে উঠল! চোখ দুটো যেন ঠিক কালো ভোমরার মত কালো... না না, ভুল বললাম... চোখ দুটো যেন কৃষ্ণগহ্বর, আমার সমস্ত অস্তিত্বকে হু হু করে টেনে নিতে চাইছে, যেন দুটো অতলান্ত গভীর সরোবর, হাতছানি দিয়ে ডাকছে আর বলছে- “আয়, আয় ঝাঁপ দে। ঝাঁপ দিয়ে মর”! এই দুর্নিবার আকর্ষণ কিছুতেই রুখতে পারছি না আমি! কিছুক্ষণ তড়িতাহতের মত ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে তারপর পেছন ঘুরে দে ছুট। রুমে ঢুকে কোনোক্রমে একটা চেয়ার ধরে ধপ করে বসে পড়েছি। বহুক্ষণ কথাই বেরোচ্ছিল না মুখ দিয়ে। হতবাক হয়ে যাওয়া যে কাকে বলে সেদিন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম। বন্ধুরা বারবার বলে যাচ্ছিল- “কী হয়েছে? বল কী হয়েছে”? আমি কোনো উত্তরই দিতে পারছিলাম না।
আমি যখন ওই অদ্ভুত ছেলেটির সম্মুখীন হই তখন আমার হাতে ছিল আমার মোবাইলটা। একটু ধাতস্ত হতেই খেয়াল করলাম মোবাইলের স্ক্রিনটা পুরো কালো হয়ে গেছে। কিছুতেই অন করা যাচ্ছে না। সে মোবাইল আর জীবনেও অন করা যায়নি। এ দোকানে দিলাম, ও দোকানে দিলাম, কেউ সেরে দিতে পারল না। মনে আছে আনন্দ, উল্লাস দূরে থাক সে রাত্তিরটা আমি একটা বিচ্ছিরি রকম ট্রমার মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছিলাম।
তারপর মাসখানেক কেটে গেছে। পাকেচক্রে আমরাও সপরিবারে যাদবপুরে এসে উঠেছি। পাকাপাকি ভাবে আমরাও এখন যাদবপুরের বাসিন্দা। আমি কী করতে যেন স্টেশন রোডের ওদিকটায় গিয়েছিলাম, কীসব যেন কেনাকাটা করার ছিল। ফেরার পথে স্টেশন রোডের ভিড় এড়াতে ভাবলাম ইউনিভার্সিটির ভেতরের রাস্তাটা দিয়ে যাই। সেইমত ইউনিভার্সিটির এক -নম্বর গেট দিয়ে ঢুকেছি, দু-নম্বর গেট দিয়ে বেরিয়ে যাবো। তখন শীতটা সবে সবে পড়ছে। এইমাত্র সন্ধে নেমেছে। হঠাৎ দেখলাম, একটা ছোট মত ছেলে মাথা নিচু করে হনহন করে হেঁটে আসছে, পরনে কালো হুডি, মাথায় হুড তোলা। অস্বাভাবিক দ্রুত তার গতি। আমার মনে হতে লাগল, বাকি পৃথিবীটা যেন থেমে গেছে সেই মুহূর্তে। নিমেষের মধ্যে ছেলেটি আমার সামনে এসে পড়ল। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে একবার মুচকি হেসে দিয়ে ছেলেটি ছাত্র-ছাত্রীদের ভিড়ে কোথায় যে মিশে গেল আর দেখতেই পেলাম না। হ্যাঁ, সেই ছেলেটিই। সেই মুখ। আর সেই সর্বনেশে মায়াবী চোখ। আমি চেঁচাতে চেয়েছিলাম। চিৎকার করে বলতে চেয়েছিলাম- “ওই ছেলেটি, ওই ছেলেটি, ধরো ওকে ধরো”। কিন্তু, গলা দিয়ে আমার আওয়াজই বেরোলো না। বাড়িতে এসে দেখি, আবার মোবাইলের স্ক্রিন কালো, কিছুতেই অন হচ্ছে না। যথারীতি আবার একটা মোবাইল দেহ রাখল।
মৌটুসী-তানিয়াদের এসব বলে কোনো লাভ হয়নি। ওরা ব্যাপারটাকে একটুও সিরিয়াসলি নিতে পারেনি। উল্টে আমায় দেখলেই ‘পাতালঘর’ সিনেমার ওই গানটা আছে না- ‘তুমি কাশী যেতে পারো/ যেতে পারো গয়া/ পাবেনা এমন অপয়া’? ওই গানটা গেয়ে গেয়ে শোনাতো আর কথায় কথায় “ওই অপয়া আসছে, ওই অপয়া আসছে” বলে ভয় দেখাতো। আমিও ওই বাচ্চাটির ভয়ে সচরাচর ইউনিভার্সিটির মধ্যে আর ঢুকতাম না। তাছাড়া মাস-খানেক অন্তর অন্তর একটা করে মোবাইল কেনা সম্ভব নাকি?
যাই হোক, পরবর্তি কালে পড়াশোনা করে জেনেছি, সারা পৃথিবীতেই নাকি এই কালো চোখের শিশু বা ব্ল্যাক-আয়েড-কিডস্রা বিভিন্ন মানুষের দৃষ্টিগোচরে এসেছে। প্রাশ্চাত্য দেশগুলিতে এদের নিয়ে সত্যি-মিথ্যে অনেক কাহিনী প্রচলিত। এরা নির্জন দুপুরে লোকের বাড়িতে এসে খাবার, কিম্বা পয়সা চায়। অথবা ফাঁকা পার্কিং-এ জানলার কাঁচ ঠুকে ভিক্ষা করে। সবাই এদের দেখলে দূর দূর করে তাড়ায় অথবা নিজেরাই ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়। বেশিরভাগ সময় এই বাচ্চাগুলো হুডি পরে থাকে। বয়স সাধারণত পাঁচ থেকে পনেরোর মধ্যে। এদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, এদের চোখে কোনো সাদা অংশ নেই। পুরোটাই কালো। ব্ল্যাক -হোলের মত কালো। আর এরা কোথা থেকে আসে আর কোথায়ই বা চলে যায় তা আজ অবধি কেউ জানতে পারেনি।
আজও আমি, ভরদুপুরবেলা কেউ এসে বেল বাজালে দরজা খুলতে ভয় পাই। যদি আবার সে আসে! এসে যদি খেতে চায়! আবার যদি ওর ওই শূন্য চোখ দুটোকে দেখতে হয়! মাঝে মাঝে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে মনে হয়, হুডি পরা একটা মুখ যেন আমার মুখের ওপরে ঝুঁকে পড়েছে, তার চোখ দুটো যেন আস্ত একটা নক্ষত্র গিলে খেয়ে নিতে পারে! সে আমার সমস্ত সত্বাকে যেন শুষে নিচ্ছে, আমি হারিয়ে যাচ্ছি, গভীর কালো কুয়োর মত দুটো চোখের মধ্যে আমি ডুবে যাচ্ছি...
আভেমারিয়া
তোমার মা এলে
সব দুঃখ কেচে দেবে,
শুকিয়ে রাখবে তোমার ক্ষত,
আয়রন করে দেবে
তোমার এলোমেলো মুহূর্ত।
সব দুঃখ কেচে দেবে,
শুকিয়ে রাখবে তোমার ক্ষত,
আয়রন করে দেবে
তোমার এলোমেলো মুহূর্ত।
কাকিমা চলে গেলে
আমিতো মার হাতে-পায়ে
পেরেক ঠুকে দেবো আবার,
আমিতো মার হাতে-পায়ে
পেরেক ঠুকে দেবো আবার,
আর বলবো -
আয় রে, সখা,
দুজনে মিলে এবার
আয় রে, সখা,
দুজনে মিলে এবার
পিয়েটা মূর্তি ধরি!
আমি কিম্বা অপেক্ষা
তোমাকে দুধ ভাত;
আজকাল আমি আর অপেক্ষা
এক সাথে শপিং-এ, বিকেল হাঁটতে।
আজকাল আমি আর অপেক্ষা
এক সাথে শপিং-এ, বিকেল হাঁটতে।
অপেক্ষার মধ্যে পটাশিয়াম সায়ানাইড
মিশিয়ে দেখেছি,
একটা নতুন ধরণের ধোঁয়া-
কেমন মহুয়া মহুয়া…
মিশিয়ে দেখেছি,
একটা নতুন ধরণের ধোঁয়া-
কেমন মহুয়া মহুয়া…
দুজনে দুটো ধারালো ছুরি হাতে,
আমি আর অপেক্ষা
পাশাপাশি শুয়ে খুনসুটি করি!
আমি আর অপেক্ষা
পাশাপাশি শুয়ে খুনসুটি করি!
একদিন গাছের নিচে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করেছিলাম,
আমি মরে গেলেও কি
অপেক্ষা বেঁচে থাকবে?
আমি মরে গেলেও কি
অপেক্ষা বেঁচে থাকবে?
এসব জিজ্ঞাসায় কিছুটা বোরাক্স মিশিয়ে
তাপ দিলে
তাপ দিলে
দেখবে কেমন খই ফুটছে সোহাগে!
নেমেসিস
সরোবরের জলে হেঁটে চলেছেন দেবী,
আমার চোখের তারা বড় হচ্ছে ক্রমশ…
আমার চোখের তারা বড় হচ্ছে ক্রমশ…
শুধু একবার বলো,
তোমার নাম বিষন্নতা,
বলো, তোমার নাম আচ্ছন্নতা-
তোমার নাম বিষন্নতা,
বলো, তোমার নাম আচ্ছন্নতা-
না হয় মিথ্যে করেই বলো,
আমার রক্তে রক্তে
খেলছো তুমিই।
আমার রক্তে রক্তে
খেলছো তুমিই।
ঠোঁটে ঠোঁট নাইবা হলো,
মা বলেছে, আগুনে
মা বলেছে, আগুনে
কোনো দোষ নেই!
ভাগফল
একটি প্রকাণ্ড বাদশাহি আংটি
ঘষে ঘষে নিচ্ছে বন্ধুত্বের তালব্যশ,
রঙিন স্কার্ফে জড়িয়ে নিয়েছো
আমার কনে দেখা আলোটুকু,
ক্রমশ ঘন হচ্ছে
তোমাদের যত রাজ্যের সব ঈশপের গল্প-
ঘষে ঘষে নিচ্ছে বন্ধুত্বের তালব্যশ,
রঙিন স্কার্ফে জড়িয়ে নিয়েছো
আমার কনে দেখা আলোটুকু,
ক্রমশ ঘন হচ্ছে
তোমাদের যত রাজ্যের সব ঈশপের গল্প-
ঈর্ষা নয়, সুচেতনা,
তোমার জল বিভাজিকা ধরে হাঁটতে হাঁটতে
তোমার জল বিভাজিকা ধরে হাঁটতে হাঁটতে
আমার বর্ষা এসে যায়!
আমার প্রথম কবিতার বই
আমার প্রথম কবিতার বইটি হয়ত এখনও
তোমার ঘরে –
তোমার ঘরে –
চুপচাপ লক্ষ্য রাখছে তোমার পালতোলা যাপনচিত্রে,মিলিয়ে নিচ্ছে সরলের বেজন্মা নিয়ম-কানুন,তোমার সময়নদী বয়ে যাচ্ছে অন্যখাতে...
তুমি খেয়াল করছো না।
আমার বইটি, একদিন দেখো, ধুলো ঝেড়ে উঠে পড়বে ঠিক;ভোরবেলা তোমায় ঘুম থেকে তুলে বলবে - চলি!
আমি ওর কাছ থেকে শুনে নেবো তোমার
গুহাজীবনের আদিম রহস্য,তারপর ইতিহাসের পাতা থেকে ছিঁড়ে নেবো
পৌরাণিক কিছু প্রতিশোধ -
গুহাজীবনের আদিম রহস্য,তারপর ইতিহাসের পাতা থেকে ছিঁড়ে নেবো
পৌরাণিক কিছু প্রতিশোধ -
কিছু খুদকুঁড়ো ভালোবাসার লোভ,আদরের মতো মিষ্টি কিছু শব্দবন্ধ...
বন্ধু, ভালো থেকো!
একটি অস্থির বিড়াল
ওইযে বেড়াল,সারাদিন এবাড়ি, ওবাড়ি, সেবাড়ি;তোমরা দেখছো -মাছের কাঁটা, খাম - খেয়াল, নি:শব্দ চলাফেরা...
আসলে বিড়ালটির তিনদিকে তিনটি ভূখন্ড
আরসে থাকে মধ্যবর্তী কোনও এক না-মানুষের রাজ্যে,যে কোনও সীমান্তে তার প্রবেশ অবাধ!
আরসে থাকে মধ্যবর্তী কোনও এক না-মানুষের রাজ্যে,যে কোনও সীমান্তে তার প্রবেশ অবাধ!
অথচ, একটা রিফিউজি বেড়াল ষোলো – আনা জানে,
'বিতাড়িত' শব্দের আসল মানে...
'বিতাড়িত' শব্দের আসল মানে...
আঁখোমে বসে হো তুম
পেটের মধ্যে মোচড় দিচ্ছে অখাদ্য কিছু শব্দ,অজানা ক্লান্তিতে বেজে উঠছে নাইন্টিজ্ -
'আঁখোমে বসে হো তুম';
'আঁখোমে বসে হো তুম';
এসব কবিতার সাক্ষী তো ওই একটি
ঢুলুঢুলু চায়ের দোকান,আর দোকানের তেত্রিশ কোটি দেওয়ালজোড়া
যীশুঠাকুর, বুদ্ধঠাকুর...
ঢুলুঢুলু চায়ের দোকান,আর দোকানের তেত্রিশ কোটি দেওয়ালজোড়া
যীশুঠাকুর, বুদ্ধঠাকুর...
ওরা কাউকে বলবেনা কোনোদিন
আমাদের নিষিদ্ধ, নিপাতনে সিদ্ধ ব্যঞ্জনসন্ধি।
আমাদের নিষিদ্ধ, নিপাতনে সিদ্ধ ব্যঞ্জনসন্ধি।
একটু বাদে ঢাকুরিয়া ব্রিজ সিঁড়ি নামিয়ে
তুলে নিয়ে যাবে আমাদের,অপাচ্য শব্দেরা বমি করতে করতে,বমি করতে করতে
আলাদা হয়ে যাবে সব...
তুলে নিয়ে যাবে আমাদের,অপাচ্য শব্দেরা বমি করতে করতে,বমি করতে করতে
আলাদা হয়ে যাবে সব...
আমাদের আর কবিতা হওয়া হলনা গো!পেটের মধ্যে অকালবর্ষণের ব্যথা চেপে শুনছি,চায়ের দোকানটা মম করছে পুরনো গানে –
'আঁখো মে বসে হো তুম'!
'আঁখো মে বসে হো তুম'...
'আঁখো মে বসে হো তুম'...
যারা চলে যায়
তোমায় দু:খ পেয়ে যারা চলে যায়,
তোমায় অ-বুঝে যারা সরে যায়,
তোমায় অ-বুঝে যারা সরে যায়,
ভোরবেলা খোলা জানলায় তাদের সাথে পাখি
ডাকো তুমি?
ডাকো তুমি?
তাদের মনে করে ঘুমভাঙা সিগনাল পার হয়ে যাও...
এসব অনাসৃষ্টি দেখতে দেখতে ভুলগুলো সব
ভুলেই মরি আমি;
অপেক্ষার সেলাই কেটে বেরিয়ে আসে নতুন চারাগাছ,
পুঁজ-রক্তের মতো লালন করি তাকে...
ভুলেই মরি আমি;
অপেক্ষার সেলাই কেটে বেরিয়ে আসে নতুন চারাগাছ,
পুঁজ-রক্তের মতো লালন করি তাকে...
অচেনা সুগন্ধি হাসিতে কবে যে বুঝে নেবে তুমি,
আমাদের উড়োচিঠি সম্পর্ক
আমাদের উড়োচিঠি সম্পর্ক
দু-ফর্মাতেই শেষ!
সীমিতা মুখোপাধ্যায়
Simita Mukhopadhyay
Comments
Post a Comment